পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র ও নমুনা

পার্টনারশিপে ব্যবসার চুক্তি পত্রকে অংশীদারি দলিল ও অংশীদারিত্ব চুক্তিনামা বলা হয়। আজকে আমার এই লেখা থেকে, আপনি জানতে পারবেন পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র কিভাবে লিখতে হয়।
পার্টনারশিপ-ব্যবসার-চুক্তিপত্র-ও-নমুনা


পার্টনারশিপের ব্যবসার চুক্তিনামা ও নমুনা দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি হচ্ছে ১ঃ অংশীদারী । ২ নাম্বার হচ্ছে লিমিটেড কোম্পানি। দুই হাজার টাকার স্ট্যাম্পে পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র লিখতে হয়।

পেজ সূচিপত্র:পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র নমুনা

১ নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

১.চুক্তিপত্র কত তারিখে লেখা হয়েছে সেটি লিখতে হবে ।

২.প্রথম পক্ষের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা গ্রাম, ডাকঘর পোস্টাল কোড, থানা, জেলা, জন্ম তারিখ ইং, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, জাতীয়তা, ধর্ম এবং পেশা।

৩.দ্বিতীয় পক্ষের নাম,পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা গ্রাম, ডাকঘর পোস্টাল কোড, থানা, জেলা, জন্ম তারিখ ইং, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, জাতীয়তা, ধর্ম এবং পেশা।

ধরুন আপনারা পার্টনারশিপের ব্যবসা করছেন পাঁচজন তাহলে একইভাবে পাঁচজনের নাম ঠিকানা সবকিছু লিখতে হবে।

আরো পড়ুনঃ

২ নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

২.নাম্বার পাতায় যেটি লেখা থাকে সেটি হল 
ধর্ম অনুযায়ী তাদের স্রষ্ঠাদের স্মরণ করে একটি সংক্ষেপে মৌলিক কিছু বিষয়ে বিষয়ের উপর লেখা থাকে যেমন ধরুন [ পরম করুনাময় মহান আল্লাহ তা আলার নাম স্মরণ করিয়া অত্র অংশীদারি চুক্তিপত্র দলিলের আয়নানুগ বয়ান আরম্ভ করিতেছি ] দ্বিতীয় পাতায় এইসব বিষয়ের উপর লেখা থাকে। বাকি যেসব বিষয়গুলো লেখা থাকে সেগুলো আপনি স্ট্যাম্প পেপারে লেখার সময় বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।

৩ নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

৩.নাম্বার পাতায় শর্তাবলী থাকে।
১.ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম । [ আপনি আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে নামটি দিবেন সে নামটি এখানে দিতে হবে। ]

২.ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা । [ আপনি যে জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি করতে চান সে জায়গার ঠিকানা আপনাকে দিতে হবে। ]

৩.ব্যবসার ধরন। [ আপনি যে ধরনের ব্যবসা করতে চান ঠিক সেই ব্যবসার ধরনটা আপনাকে উল্লেখ করতে হবে। ]

৪ নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

৪.ব্যবসার উদ্দেশ্য। [ আপনি কি ধরনের ব্যবসা করবেন কি নিয়ে ব্যবসা করবেন আপনার ব্যবসার উদ্দেশ্য কি সবকিছুর বিষয়ে আপনাকে লিখতে হবে। ]

৫.ব্যবসার শুরু তারিখ। [ আপনি কত তারিখে ব্যবসাটি শুরু করছেন সেটি ইংরেজি এবং বাংলায় লিখতে হবে। ] 

৬.ব্যবসার মেয়াদ। [ প্রতিটি ব্যবসার একটি করে মেয়াদ থাকে যেমন কোনো ব্যবসার ৫ বছর কোনো ব্যবসার ১০ বছর কোনো ব্যবসার ২০ বছর। সাধারণত ব্যবসার মেয়াদ ৫ থেকে ১০ বছর হয়ে থাকে। তো আপনি আপনার পার্টনারশিপের ব্যবসার চুক্তিপত্র কত দিনের করতে চাচ্ছেন সেটি লিখতে হবে এইখানে ] 

৫ নম্বর পাতায় যা যা লিখতে হবে।

৭.ব্যবসা ত্যাগ করলে যে যে বিষয় গুলি মানতে হবে। ধরুন আপনি আর ব্যবসা করবেন না বা পার্টনারশিপে ব্যবসার চুক্তিপত্রতে আর থাকবেন না তাহলে আপনাকে অনেক বিষয় গুলা মানতে হবে। যেমন ধরুন আপনার পার্টনার থেকে ব্যবসার চুক্তিপত্রতে ৬০% বা ৫০% শেয়ার দেওয়া আছে।
পার্টনারশিপ-ব্যবসার-চুক্তিপত্র-ও-নমুনা


তাহলে আপনি যদি আর ব্যবসা না করেন তাহলে আপনাকে ৫০ থেকে ৬০ পার্সেন্ট যে শেয়ারটি দিয়েছেন এটি নিয়ে আপনাকে পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তি পত্র থেকে এবং ব্যবসা থেকে চলে যেতে হবে। তো বিভিন্ন রকম ব্যবসায় বিভিন্ন ধরনের নিয়ম থাকে বা চুক্তিপত্র থাকে। তাই আপনি এবং আপনার পার্টনার ঠিক করে নিবেন যে ব্যবসা চলাকালীন অবস্থায় কেউ ব্যবসা ত্যাগ করলে তাকে কি কি বিষয়গুলি মানতে হবে। আর সেই বিষয়গুলি ৫ নাম্বার পাতায় ৭ নম্বর অপশনে লিখতে হবে।

আরো পড়ুনঃ

৬ নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

৮.ব্যবসার পুঁজি।
আপনারা যে বাবসার পার্টনারশিপ ব্যবসায়ী ঠিক সেই ব্যবসায়ে আপনি এবং আপনার পার্টনার যে টাকাটা ইনভেস্ট করবেন সেটি হচ্ছে আপনাদের ব্যবসার পুঁজি। এখন আপনারা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন যে কে কত টাকা বা কত পার্সেন্ট ইনভেস্ট করবেন। আপনাদের ব্যবসায় ধরন আপনি ইনভেস্ট করলেন ৫০% এবং আপনার পার্টনার ইনভেস্ট করল ৫০%। তাহলে ব্যবসার ধরনটি হল ৫০% শেয়ারে ব্যবসা।

ধরুন ১০ লক্ষ টাকা লাগবে আপনাদের ব্যবসা করতে তাহলে আপনাকে দিতে হবে ৫ লক্ষ টাকা এবং আপনার পার্টনারকে দিতে হবে ৫ লক্ষ টাকা তাহলে আপনাদের পাঠা শিবার অংশ ৫০% এবং ৫০% হবে। কেউ চাইলে ৬০% আবার ৪০% ও দিতে পারে। তো আপনাদেরকে ৬ নম্বর পাতায় এ ব্যবসার মূলধন কে কত পারসেন্ট দিচ্ছে সেটি লিখতে হবে । বা নিশ্চিত করতে হবে ।

৭ নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

৯.ব্যবসার লাভের অংশ বন্টন। পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্রতে আপনাদেরকে ব্যবসার লাভের অংশ কিভাবে নিবেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যেমন ধরুন আপনি ইনভেস্ট করেছেন ৬০% এবং আপনার পার্টনার ইনভেস্ট করেছে ৪০% তাহলে লাভের অংশটাও ৬০% এবং ৪০% হবে। বছরের শেষে এভাবেই হিসাব করতে হবে। ৯ নাম্বারে আপনাদেরকে ব্যবসার লাভের অংশ বন্টন নিশ্চিত করতে হবে।

১০.লাভ ক্ষতির হিসাব। প্রতিটা ব্যবসায় লাভ ক্ষতি থাকে। পার্টনারশিপ ব্যবসায় লাভ-ক্ষতির হিসাব হলো যে যেভাবে শেয়ার দিয়েছে ঠিক সে সেভাবে লাভ-ক্ষতির পার্সেন্ট পাবে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি ৪০% শেয়ার দিয়ে থাকেন তাহলে আপনার ৪০% লস হবে। আপনাকে ১০ নাম্বারে এটি নিশ্চিত করতে হবে। আবার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

৮ নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

১১.ব্যবসার ক্ষতি। আপনি ব্যবসা করতে গিয়ে যদি ব্যবসায় ক্ষতি হয় তাহলে আপনি এবং আপনার পার্টনার যে যত পারসেন্ট করে দিয়েছেন ঠিক ততো পারসেন্ট করে ক্ষতির ভাগ নিতে হবে। এটি এখানে নিশ্চিত করতে হবে।

৯ নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

১২.ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে দায়িত্ব। আপনি এবং আপনার পার্টনার, পার্টনারশিপ ব্যবসায় কে কোন দায়িত্বে থাকবেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ধরুন একজন ব্যবস্থাপরিচালক আরেকজন পরিচালক এভাবে আপনাদেরকে নিশ্চিত করে নিবেন কে কোন পদে কর্মরত থাকবেন। আর এটি ৯ নাম্বার পাতায় ১২ নাম্বারে লিখতে হবে আপনাকে।

আরো পড়ুনঃ

১০ নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

১৩.ব্যবসায়ে হিসাব যেভাবে পরিচালিত হবে। ধরুন আপনি আপনাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লেনদেন, যে মাধ্যম দিয়ে করবেন ঠিক সে মাধ্যমটি উল্লেখ করতে হবে। ধরুন আপনি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করবেন। তাহলে আপনাকে ব্যাংকের মাধ্যমেই লেনদেন করতে হবে। এবং ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর সময় যে কোন একজনের স্বাক্ষর হইলেই ব্যাংক থেকে টাকা উঠানো যাবে। এটি আপনাকে ১০ নম্বর পাতায় ১৩ নাম্বারে নিশ্চিত করতে হবে।

১১ নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

১৪.চুক্তি নামার সংশোধন। আপনাদের পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র তে যদি কোন কিছু সংশোধন করতে হয় তাহলে উভয় পক্ষের মতামত নিয়ে সেটি সংশোধন করতে হবে। আর সেই বিষয়টি এখানে লিখতে হবে।

১২নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

১৫.ব্যবসা পরিচালনার জন্য কর্মচারী। আপনি আপনার ব্যবসা পরিচালনার জন্য যদি কর্মচারী রাখেন তাহলে সেটি উভয় পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে রাখতে হবে। পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্রতে এটি নিশ্চিত করতে হবে।

১৩নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

১৬.কর্মচারীর বেতন। পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্রতে আপনাদের ব্যবসায়ীক কর্মচারীদের বেতন যেভাবে দিবেন ঠিক সে বিষয়টি এখানে নিশ্চিত কর হবে।

১৪নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

১৭.অবসর। আপনারা আপনাদের ব্যবসা থেকে যদি কেউ অবসরে যেতে চান তাহলে কিভাবে যাবেন বা কোন শর্ত মেনে অবসরে যাবেন ঠিক সেই বিষয়টি পার্টনারশিপ ব্যবসার চুক্তি পত্রতে নিশ্চিত করতে হবে।

১৫নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

১৮.অংশীদার যদি কর্মচারী থাকে। অংশীদার যদি কর্মচারী থাকে তাহলে যেটি করণীয়, তাকে বেতন দিতে হবে। ধরুন আপনাদের ব্যবসায় অনেকজন পার্টনার আছে। ঠিক সে পার্টনারদের মধ্যে যদি কোন পার্টনার বা অংশীদার প্রত্যক্ষ ভাবে কর্মরত থাকে তাহলে তাকে আলাদাভাবে বেতন দিতে হবে। পার্টনারশিপের যে টাকাটা সেটিও পাবে, এবং প্রত্যক্ষভাবে কর্মরত থাকায় এই বেতনটিও দিতে হবে। 
পার্টনারশিপ-ব্যবসার-চুক্তিপত্র-ও-নমুনা


১৯.কর্মচারী নিয়োগে অংশীদারের সম্মতি। যদি আপনাদের ব্যবসায় কোন কর্মচারী নিয়োগ করতে হয় সেটি উভয়ের বা বেশি পার্টনার হইলে তিনজনের সম্মতিতে কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে। আর এটি এখানে নিশ্চিত করতে হবে।

১৬নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

২০. মতের বিরোধী হইলে। 
আপনাদের ব্যবসায় যদি কোন মতের বিরোধ হয় তাহলে নিজেদের মধ্যে কথা বলে এটি সমাধান করতে হবে। আর এটি নিশ্চিত করতে হবে ১৬ নম্বর পাতায় ২০ নাম্বারে।

২১. বাড়তি অংশীদার নেওয়া।
আপনার পার্টনারশিপে ব্যবসায়, যে কয়েকজনের অংশ বা পার্টনারশিপ নেয়া রয়েছে,  সেগুলো ব্যতীত যদি পরবর্তীতে আরো অংশীদার নিতে হয, বা শেয়ার দিতে হয় তাহলে সকলের পরামর্শে নিয়ে নতুন পার্টনার নিতে হবে। আর এটি ১৬ নাম্বার পাতায় ২১ নিশ্চিত করতে হবে।

১৭নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

২২.চুক্তি অনুযায়ী পদ। আপনারা আপনাদের পার্টনারশিপ ব্যবসায়ে যে চুক্তিতে থাকবেন ঠিক সেই চুক্তি অনুযায়ী পদ নির্ধারণ করবেন।

২৩.ঋণ গ্রহণ। ব্যবসা পরিচালনার জন্য যদি কখনো ঋণ গ্রহণ করতে হয়, তাহলে উভয়ের মতামত নিয়ে ঋণ গ্রহণ করতে হবে। আর এটি এখানে নিশ্চিত করতে হবে।

আরো পড়ুন

১৮নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

২৪.চুক্তিনামা বাতিল। চুক্তি নামা বাতিল করতে হলে উভয়ের পরামর্শে বা একাধিক পার্টনারশিপ হইলে কমপক্ষে তিন জনের সম্মতি নিয়ে চুক্তি নামা বাতিল করতে হবে।

২৫.চুক্তির কার্যকারিতা। চুক্তির কার্যকরিতা আপনারা কতটুকু পালন করবেন  বা চুক্তির উপর কতটুকু অটুট থাকবেন সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

১৯নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

পাতা ১৯ এ স্বাক্ষর নামা ও চুক্তির সকল বিষয় নিশ্চিত করা থাকে।

২০নাম্বার পাতায় যা যা লিখতে হবে।

  • সাক্ষী গনের সাক্ষর ও ঠিকানা।
প্রথম পক্ষের স্বাক্ষর ও ঠিকানা।
দ্বিতীয় পক্ষের স্বাক্ষর ও ঠিকানা।
তৃতীয় পক্ষের স্বাক্ষর ও ঠিকানা।
  • পার্টনারশিপগন দের স্বাক্ষর ।
প্রথম পক্ষের স্বাক্ষর।

দ্বিতীয় পক্ষের স্বাক্ষর।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাল্টি টপিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

MD. Salman Islam
MD.Salman Islam
একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট ও মাল্টি টপিক আইটি-এর অ্যাডমিন তিনি অনলাইন ইনকাম, ব্লগিং, SEO ও টেকনোলজি নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। ৫ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি ক্লায়েন্টদের অনলাইনে সফল হতে সহায়তা করে যাচ্ছেন।